আজ সোমবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। এটি শুধু একটি ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন নয়; এটি বাঙালি সংস্কৃতি, পরিচয় ও ঐক্যের প্রতীক। বাঙালির নববর্ষ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যময় উৎসব। এই উৎসব ধর্ম, সমাজ ও অর্থনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সব শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে। বছর ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে বাংলা নববর্ষ। তবে এবারের বর্ষবরণ বাংলাদেশের সকল নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মত দেশের সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে আজ সোমবার সর্বজনীন লোকউৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ সেজে উঠেছে নতুন সাজে, নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা প্রধান উপদেষ্টার: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার বার্তায় এ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। যা উদযাপিত হবে সোমবার ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সালের প্রথম দিন। প্রধান উপদেষ্টা তার বার্তায় জাতিকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুভ নববর্ষ ১৪৩২। বাংলা নববর্ষের এ উপলক্ষে, আমি সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। ‘পহেলা বৈশাখ’ ঐতিহ্যবাহী উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতিতে এক অনন্য এবং লালিত স্থান অধিকার এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাঙালিদের ঐক্য এবং মহা পুনর্মিলনের দিন। বংশগতভাবে, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি নববর্ষকে নবচেতনা এবং নতুন অঙ্গীকারের সাথে গ্রহণ করে আসছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই দিনে মানুষ বিগত বছরের দুঃখ, বোঝা এবং হতাশাকে দূরে সরিয়ে রেখে সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, আনন্দ এবং ভালোবাসার চেতনায় একত্রিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছিল। কৃষিকাজ সহজতর করার জন্য তিনিই বাংলা বছরকে ‘ফসলি বছর’ হিসেবে গণনা শুরু করেছিলেন। একটি ঐতিহ্য যা সময়ের সাথে সাথে সমস্ত বাঙালির জন্য ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে বলেও তিনি উল্লে করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সময়, আসুন আমরা অতীতের দুঃখ, কষ্ট এবং দুর্ভাগ্যকে পেছনে ফেলে নতুন আশা ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাই। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সকল প্রকার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ খুলে দিয়েছে। এটি আমাদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি বলেন, এই নববর্ষ এমন একটি জাতি গঠনের জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারের দ্বারা চিহ্নিত হোক। প্রধান উপদেষ্টা নববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত সকল উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।
এদিকে, সরকার প্রথমবারের মতো ১৪৩২ সালের বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারোসহ অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে, ২৩ মার্চ বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। ঋতুর ওপর নির্ভরশীল কৃষিকাজ, আর কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল খাজনা আদায়। কৃষিনির্ভর বাংলার মানুষের সুবিধার্থে মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। হিজরি চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত নতুন সনটিই একসময় ‘বঙ্গাব্দ’ নামে পরিচিত হয়। বহু আগে থেকেই বাংলার কৃষক ও গৃহস্থরা চৈত্র মাসের শেষদিন ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ পালন করতেন। কৃষকেরা এদিন ভূস্বামীদের হাতে বাকি থাকা সকল খাজনা তুলে দিতেন, আর ব্যবসায়ীরা পুরোনো বছরের সকল লেন-দেনের হিসাব চুকিয়ে নতুন বছর উপলক্ষে খুলতেন লালসালু মোড়ানো নতুন হালখাতা, যা এখনো ধরে রেখেছেন বাংলার অনেক ব্যবসায়ী। বছরের প্রথম দিনটিকে আরো উৎসবমুখর করে তোলে শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। এগুলো মূলত সর্বজনীন লোকজ উৎসব। বাঙালির আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক গ্রামীণ বৈশাখী মেলাগুলোতে মেলে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী, খেলনা এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ। আরো থাকে নাগরদোলা, পুতুলনাচ, যাত্রা, লোকজ গানের আসরসহ নানান বিচিত্র্য বিনোদন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ আনন্দ উৎসবটি একসময় আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যায় এবং বাংলার চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি এখনও পালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বছরের মতন এবারো দেশে নানান আয়োজনে পালিত হবে দিনটি। সরকারের নেয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলগুলির শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সমন্বয় করবে। পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ভোরে রমনা বটমূলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ছায়ানট। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে। কর্মসূচি অনুসারে, পহেলা বৈশাখে প্রতিটি ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সেইসঙ্গে, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির জাতিগত গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সাথে বৈসাবি উৎসব উদযাপন করবে। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সকল জাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এদিন লাগবেনা কোনো টিকিট। বহুদিনের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করার জন্য ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নতুন বর্ষবরণ উপলক্ষে দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। বিপুলসংখ্যক অতিথির সমাগম উপলক্ষে দেশবাসীর উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু-পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেইট, হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম, অস্থায়ী পাবলিক টয়লেট এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পসহ নেয়া হয়েছে নানা ধরনের ব্যবস্থা। সরকারের নেয়া কর্মসূচি অনুসারে, বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের পরিবর্তে সংবাদপত্রগুলোতে পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করা হবে। এই উপলক্ষের উপর জোর দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুলো অনুষ্ঠান সম্প্রচার ও চিত্রিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সকল সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, বাণিজ্যিক রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিওতে শোভাযাত্রা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র সময় নির্ধারণ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা: বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। এতে আরও বলা হয়, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ। ঢাবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সামনের রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা: বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ আগামী ১৪ এপ্রিল উদযাপিত হবে। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গত শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনার কথা বলা হয়। আনন্দ শোভাযাত্রার রুট হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ইউটার্ন করে টিএসসি মোড় হয়ে শিববাড়ী ক্রসিং রোমানা ক্রসিং দিয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে টিএসসি মোড় চারুকলা বিভাগে এসে শেষ হবে। আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের রুট-১. ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল হতে শাহবাগ মোড় হতে ডানে গিয়ে কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে নীলক্ষেত মোড় দিয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে যোগ দিতে পারবেন। ২. নিউমার্কেট দিয়ে আসা লোকজন নীলক্ষেত হয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে সংযুক্ত হতে পারবেন। ৩. পলাশী দিয়ে আসা লোকজন পলাশী হয়ে নীলক্ষেত মোড় হতে ডানে গিয়ে ভিসি বাংলো মোড়ে যোগদান করতে করবেন। ৪. চাঁনখারপুল ও বকশী বাজার হয়ে আসা লোকজন পলাশী মোড় হয়ে নীলক্ষেত থেকে ডানে মোড় নিয়ে ডিসি বাংলো মোড়ে যোগদান করতে পারবেন। ডিএমপির নির্দেশনায় আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখের উৎসব সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসব আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপনের জন্য সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরআগে গত বুধবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, এনডিসি। সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পহেলা বৈশাখে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করা হবে। পহেলা বৈশাখ আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
বাংলা নববর্ষে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান: ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ এমন বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও ছায়ানট রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল রোববার সকালে একদিকে যেমন সম্পন্ন হয়েছে মঞ্চ বাঁধার কাজ, অন্যদিকে ছায়ানটের শিক্ষার্থীরাও পূর্ণ প্রস্তুত তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে। বিকেল থেকেই চলছে সর্বশেষ সাংগীতিক মহড়া। ভৈরবী রাগের সুর ধরে রমনার বটমূল থেকে শুরু হবে নতুন বছরের সূচনালগ্ন। একদিন বাদেই পয়লা বৈশাখ। পুরনো বছরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বিগত বছরের দুঃখ-বেদনা, ভুল-ভ্রান্তি পেছনে ফেলে আনন্দ আর উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে রমনার বটমূলে। ছায়ানটের পরিবেশনায় গানে গানে বর্ষবরণ করতে সকালে শেষ হয়েছে মঞ্চ বাঁধার কাজ। ৭২ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চে এবারে মোট পাঁচটি ধাপে অংশগ্রহণ করবে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। রাত পোহালেই একক ও সমবেত কণ্ঠে মুখরিত হবে রমনার প্রান্তর। ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা-প্রাণপ্রতিম সনজীদা খাতুনের অনুপস্থিতিতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটার আশঙ্কা থাকলেও ছায়ানটের সদস্যরা অনড় পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে। প্রিয় মানুষটির স্বপ্ন সফল করতে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

* পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতবে সারাদেশ * আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নানা নির্দেশনা
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ আজ
- আপলোড সময় : ১৪-০৪-২০২৫ ১২:৫৩:০৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৪-২০২৫ ১২:৫৩:০৩ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ